এইচ এম জাকিরঃ আকাশে মেঘ দেখলেই যেনো বন্ধ হয়ে যায় দ্বীপজেলা ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুট সহ অভ্যন্তরীণ ২০টি রুটের নৌ যান চলাচল। যেখানে উপকূলীয় জেলা হিসেবে এ অঞ্চলের মানুষ বরাবরই বন্যা ঝড় জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। সেখানে সামান্য বৃষ্টি কিংবা মেঘলা আকাশ হওয়ার সাথেই ভোলা-লক্ষ্মীপুরসহ অভ্যন্তরীণ ২০টি রুটের নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এই জেলার মানুষের জন্য খুবই দুঃখ ও হতাশার।
সম্প্রতি নিম্মচাপ বৈরী আবহাওয়া ও মৌসূমী বায়ুর প্রভাবে গত ১৭ আগস্ট থেকে আজ (২০ আগষ্ট) বুধবার পর্যন্ত টানা চারদিন ধরে উপকুলীয় জেলা ভোলা ও তৎসংলগ্ন জেলাগুলোর নদনদী কিছুটা উত্তাল রয়েছে। সাগর উপকুলীয় এসব এলাকার নদনদী উত্তাল থাকায় দ্বীপ জেলার আভ্যন্তরীণ ২০ রুটের নৌ-চলাচল এখনো বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ আভ্যন্তরী নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি কিছুটা বৈরী আবহাওয়ায় জেলার আভ্যন্তরীণ ২০ নৌ-রুটে লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় এখানকার যাত্রীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারন করেছে।
ভোলার আবহাওয়া অধিপ্তরের পর্যবেক্ষক মো: মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্মচাপটি ক্রমান্বয়ে দূর্বল হচ্ছে। তবুও বৈরী আবহাওয়ার ফলে জেলায় এখনো তিননম্বর সতর্ক সংকেত চলমান রয়েছে। এসময় সমূদ্র ও নদনদীগুলোর মাছধরা ট্রলার-নৌকাগুলোকে উপকুলের তীরবর্তী এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে।
১৭ আগস্ট থেকে ২০ আগষ্ট পর্যন্ত জেলার ইলিশা টু লক্ষ্মীপুর, মনপুরা টু ঢাকা, চরফ্যাশন টু ঢাকা’সহ জেলার অভ্যন্তরীণ ২০টি নৌ-রুটে ছোটবড় যাত্রীবাহী লঞ্চ ও সরকারী সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এর বাহিরেও আভ্যন্তরীন বন্ধ নৌরুটগুলোর মধ্যে রয়েছে-ভোলার ইলিশা-লক্ষ্মীপুর,ইলিশা-মেহেন্দিগঞ্জ, ভোলা-বাউফল, লালমোহন-নাজিরপুর, দৌলতখান-আলেকঝান্ডার, তজুমদ্দিন-মনপুরা, মনপুরা-হাতিয়া, চরফ্যাশন-মনপুরা, চরফ্যাশন-ঢাকা, মনপুরা-ঢাকা, চরফ্যাশনের ঘোষের হাট-ঢাকা, বোরহানউদ্দিনের হাকিমউদ্দিন-ঢাকা, ভোলার ভেদুরিয়াঘাট-বরিশালের লাহার হাট, চরফ্যাশনের কচ্ছপিয়া-ঢালচর, চরফ্যাশনের কচ্ছিয়া-কুকরী-মুকরী, চরফ্যাশনের কচ্ছিয়া-চর পাতিলা, চরফ্যাশনের আবুবকরপুর-দশমিনা, ভোলা সদরের তুলাতুলি-মাঝের চর, ভোলা সদরের ইলিশা-রামদাসপুর এবং ভোলা সদরের নাছির মাঝি-দৌলতখানের চর মদনপুর ইউনিয়ন।
এদিকে বৈরী আবহাওয়া বৃষ্টিপাতের ফলে বিপাকে পড়েছে এখানকার কর্মজীবী মানুষ। যদিও তারা বন্যা ঝড় জলোচ্ছাসহ বিভিন্ন প্রতিকূল আবহাওয়ার সাথে সংগ্রাম করে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া নির্দেশনা মানতে বাধ্য হয়ে অধিকাংশ মানুষকেই পড়তে হয়েছে চরম বিপাকে।
লক্ষ্মীপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে ইলিশা ঘাটে অপেক্ষমান যাত্রী শাহাবুদ্দিন, আরিফ, মোসলেউদ্দিন, সুমাইয়া, শেফালী বেগম সহ অসংখ্য জাতিরা বলেন, বর্ষার সময় নদী সামান্য উত্তাল থাকবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু এইটুকুতেই লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের কে ভোগান্তি ফেলার কোন মানেই হয় না। কলেজ শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এর চেয়ে বেশি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও অতীতে দেখেছি লঞ্চারাচল স্বাভাবিকই ছিলো, সম্প্রতি সামান্য আবহাওয়া খারাপ হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে বিআইডব্লিউটিএ পক্ষ থেকে সকল লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া বিষয়টি আমি কেন জেলার কারোরই হয়তোবা বোধগম্য নয়। অথচ ফেরি চলাচল ঠিক ওই স্বাভাবিক রয়েছে। ওই ফেরি দিয়েই যাত্রীরা ভোলা লক্ষ্মীপুরে পারাপার করছে। তাতে করে লঞ্চ গুলো বন্ধ করে দিয়ে ফেরিতে জাতি পারাপার করে কারো অসদ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে হচ্ছে কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ জনগণের মাঝে।
ভোলার লঞ্চ মালিক মেসার্স ব্রাদার্স নেভিগেশন কোম্পানির ম্যানেজার মো: আলাউদ্দিন জানান, নদী উত্তাল থাকায় ডেঞ্জার জোনে এখনো তাদের কর্ণফুলী সিরিজের লঞ্চগুলোর চলাচল বন্ধ রেখেছেন। তাই হাতিয়া, মনপুরা, চরফ্যাশন ও হাকিমুদ্দিন ঘাট থেকে ঢাকা রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
তবে ভোলা-বরিশাল ও ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি বুঝে কিছু ফেরি চলাচল করছে বলে জানান, বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক ইনচার্জ মো: পারভেজ। তিনি জানান, এ রুটে লঞ্চ ও সি- ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় জীবিকার তাকিদে ফেরিতে কিছু যাত্রী পারাপার করছে।
বিআইডব্লিউটিএর ভোলার বন্দর কর্মকর্তা রিয়াদ হোসেন জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া না কাটতে জেলার আভ্যন্তরীণ নৌরুটে কোনোপ্রকার লঞ্চ চলাচল করতে দেয়া হবেনা। তাছাড়া অতীতে কিছুটা বৈরী আবহাওয়ার মধ্য এ রুটে নৌযান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও বর্তমানে এই রুটকে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সম্পৃক্ত করায় দুই অঞ্চলের আবহাওয়ার একই বার্তা প্রদান করা হয়।